Find Us OIn Facebook

‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন শাবনূর। ছবিটি ব্যবসাসফল না হলেও পেছনে তাকাতে হয়নি এই ঢালিউড চিত্রনায়িকাকে। পরে একে একে ‘তুমি আমার’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘মাটির ফুল’সহ অনেক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। এসব সিনেমা থেকে পেয়েছেন ভক্তদের প্রশংসা, ভালোবাসা। এমন অনেক প্রশংসিত সিনেমাই শাবনূরের ক্যারিয়ারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এনে দিতে পারেনি। ৯০ দশক থেকে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে শাবনূর কেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি, সেটাই ছিল ভক্তদের কাছে বড় প্রশ্ন।

২০০৫ সালে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারের দেখা পান এই অভিনেত্রী। সেটাও মাত্র একবার। তখনো শাবনূর ভক্তদের জন্য এই তথ্য হয়তো মানানসই ছিল না। শাবনূরকে জাতীয় স্বীকৃতি এনে দেওয়া সেই ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমা মুক্তির দেড় যুগ পূর্তি হচ্ছে। শাবনূর-ভক্তদের জন্য মজার তথ্য হচ্ছে, এই সিনেমাতে শাবনূরের অভিনয়ের ব্যাপারে প্রথম দিকে তাঁর আগ্রহ ছিল না। সিনেমার পরিচালকের কথা শুনে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু পরে শাবনূর দেখেন ২৩-২৪ বছরের এক তরুণ এই সিনেমা বানাতে চান।

শাবনূরের তখন শিডিউল পাওয়া মানে পরিচালকদের কাছে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। সেই শাবনূরই কিনা একটানা ৪০ দিন শিডিউল দিয়ে দিলেন। তরুণ পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের কাছে যেন সবাই অবাক করার মতো ছিল। ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার এই পরিচালক বলেন, ‘আমি “ভালোবাসা কারে কয়” নামের একটি সিনেমার সহকারী হিসেবে কাজ করি। সেই সিনেমার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। তখন থেকেই চিনতেন। পরে একদিন আপাকে বললাম, আপনাকে নিয়ে আমি একটি সিনেমা বানাব। কিন্তু তিনি কোনো গুরুত্বই দিলেন না। আমার গল্পের জন্য তাঁকেই দরকার। উপায় না পেয়ে আমার বস জাকির হোসেন রাজু ভাইকে বললাম। সেটা আবার আরেক গল্প।’  

তখন মোস্তাফিজুর দেখতে একদমই তরুণ ছিলেন। সেই সময়ের পরিচালকদের সামনে; বয়সে একদমই ছোকরা ছিলেন এই পরিচালক। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বিবিএতে পড়ছেন। এই পরিচালক বলেন, ‘তখন আমি রাজু ভাইকে বললাম, আমি সিনেমা বানাব। শাবনূর আপাকে নিয়ে।’ সব শুনে রাজু ভাই শাবনূরকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আমি একটি সিনেমা বানাব। তোমার সঙ্গে একটি ছেলে দেখা করবে।’ আমি শাবনূরের বাসায় গেলাম। তাঁকে গল্প শোনালাম। গল্প ও গানগুলো শুনে আপা দারুণ খুশি। পরে জানতে চাইলেন, ‘সিনেমা বানাবে কে?’ বললাম আমি। শুনে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন, পরিচালক জাকির হোসেন রাজু সিনেমাটি নির্মাণ করবেন। কিন্তু গল্প ভালো লাগায় আমাকে তেমন কিছু বলতে পারছিলেন না।’

এরপর শাবনূর টানা ৪০ দিন শুটিংয়ে শিডিউল দিলেন। এক বছর পরে, এপ্রিল মে মাসে শুটিং হবে। এদিকে পরিচালক একদিন শাবনূরকে বললেন, একটি দৃশ্য আছে শর্ষেখেতের মধ্যে। ডিসেম্বরে সেই দৃশ্যের শুটিং করলে ভালো হয়। এদিকে শাবনূর যাবেন অস্ট্রেলিয়া। দুই দিন শাবনূর শিডিউল দিলেন। কিন্তু দুই দিনই কুয়াশায় শুটিং করা গেল না। পরে আরেক দিন সকাল আটটায় শাবনূর শিডিউল দিলেন। পরিচালক দোটানায় পড়ে গেলেন। তিনি শুনেছিলেন শাবনূর সকালে ঠিকমতো শুটিংয়ে যান না। পরে দেখলেন ঠিক সময়ে প্রস্তুত হয়ে আছেন এই চিত্রনায়িকা। সিঙ্গাইরে শুটিং হবে। সেই শুটিং ১২টার শেষ হলো। পরে পরিচালক শাবনূরকে বললেন, ২টার মধ্যে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। আজ তাঁর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। শুনে শাবনূরই ঠিকমতো পরিচালককে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছে দিলেন। শুটিংয়ের প্রথম দিনের এই ঘটনাই পরিচালককে ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।

মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘তখন শাবনূরের শিডিউল পাওয়া অনেক কঠিন ছিল। প্রথম দিনের শুটিং করতে গিয়ে দেখলাম তিনি অনেক সহযোগী একজন অভিনেত্রী। তখনই মনে হয়েছিল আমাদের কাজটি ভালো হবে। তিনিসহ সব সহকর্মীর সহযোগিতা আমাকে আশাবাদী করেছিল। সেই সিনেমা থেকে শাবনূর ক্যারিয়ারে প্রথম ও একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য ছিল দারুণ আনন্দের খবর। এটা তাঁর জন্য কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার ছিল। আমি একবার শাবনূরের জন্মদিনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার বিশেষ এই দিনে কী উপহার দেব। শুনে শাবনূর বলেছিলেন, আপনি আমার জীবনের বড় উপহারটি দিয়েছেন।’ ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে শাবনূর ছাড়াও সিনেমাটির শ্রেষ্ঠ গায়ক ও গায়িকা শাখায় দুটি পুরস্কার পেয়েছিল। সেই বছর মেরিল প্রথম আলোতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে সমালোচক বিভাগের পুরস্কার পেয়েছিলেন শাবনূর। সূত্রঃ প্রথম আলো

Post a Comment

Previous Post Next Post